Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মানব চিন্তা ও সীমাবদ্ধতা

 


মানুষ বাকি সৃষ্টি থেকে শ্রেষ্ঠ শুধুমাত্র চিন্তাশীল একটা মগজের কারণে। শারীরিকভাবে মারাত্মক দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও পুরো পৃথিবীতে চলছে মানুষের রাজত্ব। এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানের কারণে মানব জাতির মস্তিষ্কে এটা গেথে গেছে যে মানুষ বুদ্ধিমত্তায় অসীম। এর মানে হলো মানুষ মনে করে, সে যা চিন্তা করে তার বাইরে তার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কোনো চিন্তা নেই। এই কারণে মানব মস্তিস্ক প্রসূত ধারণার বাইরে যেকোনো কিছু অস্বাভাবিক লাগে, অবাস্তব লাগে। সঙ্গত কারণে অন্য কোনো সুপার বিয়িং বা এনটিটি থেকে আসা মেসেজ মানুষ তার নিজের মস্তিষ্কের ফিল্টারে ঢুকিয়ে নিজেকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে তারপর বিবেচনা করে। মানুষ এটা বিশ্বাসই করতে চায়না তার মস্তিষ্কের চিন্তারও একটা লিমিট আছে। আর এই কারণেই মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অ্যাকশন ও এট্রিবিউটগুলো নিজের ফিল্টারে ঢুকিয়ে তারপর ডিসিশন নেয়, মস্তিষ্কের ফিল্টারে উত্তীর্ণ হলে মেনে নেয়, অন্যথায় অস্বীকার করে বসে। মুমিনদের অধিকাংশ মস্তিষ্কের সাথে দ্বিমতপোষণকারী বিষয়গুলো মানতে মনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অ্যাকশন ও এট্রিবিউট গুলো কেনো  মস্তিষ্কের ফিল্টারে  ঢুকানো যাবে না তার কিছু উদাহরণ দেই।  ইবলিশ যখন ফেরেস্তা ও আদমের সামনে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো, ইবলিশকে অভিশপ্ত ঘোষণা করা হলো, আল্লাহ ক্রোধান্বিত হলেন ইবলিশের উপর, ঠিক তখনি ইবলিশ কিছু দাবি দাওয়া পেশ করে বসলো, দাবিগুলোর উদ্দেশ্য আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া এবং সবগুলো দাবিই পূরণ করা হলো। এবার মানুষের মস্তিষ্কের ফিল্টারে যদি এই ঘটনা ঢুকাই তাহলে কি দাঁড়ায় সেটা দেখা যাক। একটা চাকর দীর্ঘদিন ধরে আপনার বাড়িতে কাজ করছে, একদিন আপনার বাড়িতে কিছু  গন্যমান্য মানুষের উপস্থিতিতে আপনার একটা গুরুত্বপূর্ণ আদেশ অমান্য করে বসলো। আপনার অবস্থা একটু কল্পনা করুন। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাবে, হয়তো মারধর ও শুরু করে দিতে পারেন সাথে সাথে, ন্যূনতম শাস্তি হলো সাথে সাথে চাকরিচ্যুত। এরপরের ব্যাপারটা আরো কঠিন। সেই চাকর যদি আপনাকে বলে ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে এমন কিছু জিনিস প্রদান করুন (যেমন: টাকা পয়সা, লোক লস্কর ইত্যাদি)  যাতে আমার সক্ষমতা কিছু বাড়ে এবং পরবর্তীতে আপনি যে আমাকে চাকরিচ্যুত করলেন এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। চাকরের এই আবদার পূরণের পক্ষে কি পৃথিবীর কোনো মস্তিষ্ক সায় দিতে পারে? অবশ্যই পারে না, মস্তিস্ক আপনাকে বলবে, এর থেকে অবাস্তব আবদার আর হতে পারে না।  ঠিক, এটাই হলো আমাদের মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা, যেই সীমাবদ্ধতার কারণে চাকরটির আবদার মেনে নেয়া যে সম্ভব, এটা মস্তিষ্কের চিন্তার বাইরে।

আরেকটা উদাহরণ দেই। ধরুন একটা লোককে আপনি  বললেন তুমি যদি আমাকে অল্প কিছু টাকা (১০০-২০০) দাও তাহলে পঞ্চাশ বছর পরে তোমার উপরে মারাত্মক একটা বিপদ আসবে তখন আমি তোমাকে এই ১০০-২০০ টাকার বিনিময়ে ওই বিপদ থেকে উদ্ধার করবো। লোকটি বিষয়টি গুরুত্ব দিলো না, আপনাকে ইগনর করলো।  কিন্তু দেখা গেলো ৫০ বছর পরে সেই মহাবিপদটি এসে উপস্থিত। লোকটি তখন বিপদ দেখে আপনার দাবি দাওয়া না থাকা সত্ত্বেও আপনাকে ১ বিলিয়ন ডলার দিয়ে বললো আপনি আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। লোকটির কাছে মহাবিপদ হলেও আপনার কাছে লোকটিকে বিপদটা থেকে উদ্ধার করা এক গ্লাস পানি খাওয়ার চেয়েও সহজ। আপনার মস্তিস্ক এখানে যেসব চিন্তা করবে তাহলো,  চিন্তা ১: আপনি যদি লোভী হন তাহলে পুরো ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লোকটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। চিন্তা ২: আপনি যদি সৎ হোন হয়তো অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে লোকটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। চিন্তা ৩: আপনি যদি দুর্দান্ত সৎ হোন তাহলে টাকা ছাড়াই লোকটিকে বিপদমুক্ত করবেন। আপনি লোকটির কাছ থেকে টাকাও নিবেন না আবার মহা ভয়ঙ্কর বিপদ থেকেও  মুক্তি দিবেন না, এই চিন্তা করা কি সম্ভব? আপনার মস্তিস্ক কস্মিনকালেও এই কাজটি করার পক্ষে সায় দিবে না। অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত ৩টি চিন্তা ছাড়া  অন্য যেকোনো চিন্তা আপনার মস্তিষ্ক প্রত্যাখ্যান করবে বাস্তবতা বিবর্জিত বলে।

এবার দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বললেন, তোমরা যদি দুনিয়াতে একটু কাঁদো আমার ভয়ে তাহলে আখিরাতে ভয়ঙ্কর জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবো। আপনি এটাকে ইগনোর করলেন, ভাবলেন এসব হয়তো মিথ্যা  (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহর কথা মতো আল্লাহর ভয়ে একটুও কাঁদলেন না। হটাৎ মৃত্যু, আখিরাত এসে গেলো জাহান্নাম আপনার সামনে আপনি এখন কাঁদতেছেন, কলিজা ফাটা কান্না, চোখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে , আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইছেন। আল্লাহ আপনার আখিরাতের কাঁন্নার কোনো মূল্য দিবেন না, তা আপনি যতই কাঁদেন অথচ আপনাকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করালে আল্লাহর কোনোই ক্ষতি বা লাভ নেই তারপরেও আপনার গগনবিদারী কান্নার কোনো মূল্য থাকবে না সেইদিন। অথচ দুনিয়াতে মাছির মাথার মতো কাঁদলে নিস্তার পেতেন, আর আখিরাতে কেঁদে কেঁদে কলিজা ছিঁড়ে ফেলেও লাভ হবে না। কি আমাদের মস্তিস্ক কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা র এই পদ্ধতিটা বুঝতে সক্ষম? স্বাভাবিক মস্তিষ্ক এটা মানতে পারবে না, কোনো যুক্তিই  দাঁড় করাতে পারবে না। এখানেই মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা। 

আমরা মনে করি আমাদের চিন্তার বাইরে আর কিছু নেই, এই ভাবনাটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। মানুষ নিজেকে বিশাল কিছু মনে করে অথচ মহাকালের কাছে মানুষ বালুকণার মতো। মানুষ তার নিজের অস্তিত্বের আগে এই মহাজগতের অবস্থা কেমন ছিল তা বলতে পারে না, আবার তার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এই মহাবিশ্বের কি হবে তাও বলতে পারবে না। 

মানুষ হলো সেই অসীম সময়ের স্কেলের একটা ক্ষুদ্র দাগের থেকেও ক্ষুদ্র যেই স্কেলের শুরুর ও শেষের কোনো প্রান্ত নেই। ক্ষুদ্র একটা টাইম ফ্রেমে মানুষের আনাগোনা। মানুষ সেই সত্তার সাথে লড়তে চায় যিনি তার সৃষ্টির পূর্বেও ছিল এখনো আছেন ভবিষতেও থাকবেন, আর  ক্ষুদ্র মানব জাতি হয় জাহান্নামে অথবা জান্নাতে থাকবে তারা কখনোই জানতে পারবে না মহামহিময় তখন  কি করছেন, তার বাকি সৃষ্টির ভাগ্যে কি জুটেছে, সামনের অনন্ত সময়ে কি ঘটবে?

মানুষ, কি যে তুচ্ছ, কি যে নির্বোধ এক সৃষ্টি!!

Post a Comment

0 Comments